দেশবন্ধু গ্রুপের দুই গার্মেন্টসের উদ্বোধনীতে বাণিজ্যমন্ত্রী

 
দেশবন্ধু গ্রুপের দুই গার্মেন্টসের উদ্বোধনীতে বাণিজ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন ও রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে
 
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Published : Wednesday, 31 March, 2021 at 5:34 PM, Update: 31.03.2021 6:05:34 PM
Source: দৈনিক আজকালের খবর (https://www.ajkalerkhobor.net/details.php?id=97340)
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরো এগিয়ে গেল দেশবন্ধু গ্রুপ। জাতির পিতার স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের শিল্প-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানোর ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো দেশের  স্বনামধন্য শিল্প ও বাণিজ্য গ্রুপ দেশবন্ধুর আরো দুটি পোশাক কারখানা সাউথইস্ট সোয়েটার লিমিটেড ও জিএম অ্যাপারেলস লিমিটেড।
 
বুধবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর উত্তরখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কারাখানা দুটি উদ্বোধন করে বলেন, দেশে ফের করোনার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এর থেকে সুরক্ষা পেতে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। এটা সবাইকে মানতে হবে। দেশের সব ধরনের পোশাক কারখানায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো প্রকার ধাক্কা না লাগে। দেশবন্ধু গ্রুপ করোনার শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিজেকে, দেশকে ও দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে দেশবন্ধু গ্রুপের মতো সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 
 
দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৮) আলহাজ মোহাম্মদ হাবিব হাসান, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাসুদুর রহমান শাহ, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শামসুল আরেফিন, উত্তরখান ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, দক্ষিণখানের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন,  জিএম অ্যাপারলেস লিমিডেটের এমডি ও সাউথইস্ট সোয়েটার লিমিটেডের সিইও মাহবুবুর রহমান লাকী, শ্রমিক কল্যাণ কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার শশী ও সাউথইস্ট গার্মেন্টসকমী পপি আক্তার। এ সময় দেশবন্ধু গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশবন্ধু আসলেই দেশ ও জনগণের বন্ধু। মহামারি করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কার্যক্রম চলমান রেখেছে। কোনো কর্মকর্তা এমনকি কোনো শ্রমিকের চাকরি হারাতে হয়নি। শতকষ্টের মধ্যেও তাদের বেতনভাতা পরিশোধ করে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রী বলেন, এর চেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে।
 
তিনি বলেন, পোশাক শিল্প হলো বাইসাইকেলের মতো, যা দুটি চাকার ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে চলে। পোশাক শিল্পেও মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্কের ভিত্তিতে ভালো কিছু করা সম্ভব। যা দেশবন্ধু গ্রুপের মধ্যে রয়েছে। গ্রুপের মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যে বন্ধন তা দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়।
 
 
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়তই তারা দেশের জন্য ভালো ভালো কাজ করছেন। কিছুদিন আগেও মঙ্গাপীড়িত এলাকা নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তৈরি করেছেন অত্যাধুনিক ডেনিম কারখানা। যার উদ্বোধন আমার হাতেই হয়েছিল। আজ আবারো আমার হাতেই উদ্বোধন হলো আরো একটি দুটি পোশাক কারখানা, সাউথইস্ট সোয়েটারস লিমিটেড এবং জিএম অ্যাপারেলস লিমিটেড।  এটা আমার জন্য সত্যিই একটি ভালো লাগার মুহূর্ত। নতুন এই কোম্পানি দুটি বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে। যা শিগগিরই আরো বৃদ্ধি পাবে। 
 
তিনি আরো বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় পার্শ্ববর্তী সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে যারা এ দেশকে শোষণ করতো, স্বাধীন হয়েই আজ তাদের চেয়ে সব সূচকে শতভাগ উপরে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। যিনি উন্নত জীবন-যাপনের জন্য দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় তিনি সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন।  তবে তার সে স্বপ্ন হারিয়ে যায়নি। সময়ের ব্যবধানে তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই হাল ধরেছেন। যার সহযোগী হলেন দেশবন্ধু গ্রুপের কর্ণধার গোলাম মোস্তফা। যিনি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরির স্বপ্ন দেখেন ও তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এমনিতেই গ্রুপের ১৫ হাজার লোক কাজ করছেন। নতুন এই কারখানায় আরো তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
 
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে সার্বিক সহায়তা করতে হবে।       
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বাগত বক্তব্যে স্বাধীনতার এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও লাখো শহীদ এবং তার মরহুম পিতামাতাকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তার রেখে যাওয়া স্বপ্ন আমাকে তাড়া করে। সেই তাড়া থেকেই স্বাধীনতার মাসে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরে ভালো লাগছে। যা বেশিরভাগই কারখানা এলাকার মানুষ।
 
 
তিনি বলেন, দেশের অনেক কোম্পানি দেশের মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। তবে দেশবন্ধু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশ্বাস করে। তিনি আরো বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট সোয়েটার লিমিটেড। যার উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রপ্তানি হয়। এতে অর্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ও সরকারের সহযোগী হয়ে সামনের দিকে আরো এগিয়ে যেতে চাই।
  
গোলাম মোস্তফা বলেন, জাতি ও দেশ গঠনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ দেশবন্ধু গ্রুপ। এ অঙ্গীকার পূরণে দেশের দুর্যোগময় সংকটে প্রাণহানির ঝুঁকি জেনেও গ্রুপের সব কারখানায় সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি শতভাগ মেনে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। একইসঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিক-কর্মচারীসহ ঊধ্বর্তন কর্তাব্যক্তিরা। সবারই উদ্দেশ্য দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
 
সংসদ সদস্য আলহাজ মোহাম্মদ হাবিব হাসান বলেন, সাউথইস্ট সোয়েটার কারখানার কর্মপরিবেশ এতো সুন্দর ও মনোরম যা নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। কারখানায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতেও এগিয়ে যাবে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
 
মাহবুবুর রহমান লাকী বলেন, এখানে যারা কাজ করেন তারা দেশের প্রথম সারির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে কোনো অবস্থাতেই পণ্যের মানের বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয় না। শতভাগ কোয়ালিটি বজায় রেখে সাউথইস্ট সোয়েটারের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে বিশ্বমানের পণ্য।
 
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ট্রেডিং ও সার আমদানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ ‘দেশবন্ধু’। তারপর থেকে দেশের এই প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপটিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে গ্রুপটি অগ্রগতির ৩২ বছরে পদার্পণ করেছে। বর্তমানে চিনিশিল্প, সিমেন্টশিল্প, সার কারখানা, শপিং মল, শিপিং, টেক্সটাইল মিল, তৈরি পোশাক কারখানা, পলিমার, কনজ্যুমার, বেভারেজ, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, আবাসন ও লজিস্টিকসহ চালকল থেকে শুরু করে মিডিয়া-সবই রয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের।