দুই হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আনছে দেশবন্ধু গ্রুপ

 
দুই হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আনছে দেশবন্ধু গ্রুপ
 
রবিউল ইসলাম
Source: দৈনিক আজকালের খবর (https://www.ajkalerkhobor.net/details.php?id=96532)
Published : Sunday, 14 March, 2021 at 8:35 PM, Update: 15.03.2021 1:45:08 AM
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সুকুকের মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় দুই হাজার একশ’ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আনতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ দেশবন্ধু। এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক সুকুক স্ট্রাকচারিং বিষয়ে বিখ্যাত ব্যাডফোর্ড রো ক্যাপিটেল কোম্পানিকে আল ওয়াসিলা পিএলসি মেনডেট দিয়েছে। ওই সুকুকটি আবার ফ্রাঙ্কফুট স্টক এ্যাক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে, যা ২০২৮ সালে ম্যাচিউর হবে। ব্যাডফোর্ড রো ক্যাপিটেলের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্লুমাউন্ট ক্যাপিটাল লিড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে।
 
সুকুক হলো বিশ্বব্যাপী চালু থাকা একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড। এটা এক ধরনের বিনিয়োগ। এটা কোনো ঋণ নয়। 
সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। বাংলাদেশে বিদেশি বিনোয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পূর্বানুমতি লাগে না। শুধু ঋণের অনুমতি প্রয়োজন। 
 
দেশবন্ধু বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম একটি শিল্প গ্রুপ।  চিনি, সিমেন্ট, খাদ্য-পানীয়, ভোজ্যতেল, টেক্সটাইল, পোশাক, পলিমার ও প্যাকেজিং, পাবলিকেশন্স, শিপিং, শপিংমল, আবাসন খাত, অটো রাইসমিল, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের। এসব ব্যবসায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সরাসরি কর্মরত আছেন। গ্রুপটির শিল্প-কারখানা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত এবং গ্রামীণ অর্থনীতি ও জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখছে দেশবন্ধু গ্রুপ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসায় দিক-নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে দেশবন্ধু গ্রুপ। যেমন শপিংমল ব্যবসায় নতুন ধারণা নিয়ে গ্রুপটি রাজধানী ঢাকায় রাপা প্লাজা তৈরি করেছে। তেমনি বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে সার আমদানি ও সরবরাহ এবং অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে বন্ধ সুগারমিল চালু করে দেশের বাজারে নিরবচ্ছিন্ন চিনি সরবরাহ করে আসছে গ্রুপটি। একইসঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। দেশের উত্তরের অবহেলিত অঞ্চলে শিল্পায়নের বিকাশের জন্য নীলফামারী ইপিজেডে দেশের সর্ববৃহৎ ডেনিম কারখানা চালু করেছে দেশবন্ধু গ্রুপ, যেখানে প্রায় ছয় হাজার মানুষের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছে। 
 
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্প সময়ের জন্য এফডিআর নিয়ে কয়েক বছরের জন্য প্রকল্প ঋণ দিয়ে থাকে। যা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। কারণ বাংলাদেশ এখন আর একেবারেই ছোট অর্থনীতির দেশ নয়। একেকটি কারখানায় কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। ইকোনোমিক স্কেলে ছোট কারখানাগুলো সারা পৃথিবীতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। 
 
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, দুর্বল অবকাঠামো ও সেবাখাতের ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে ঋণ নিয়ে কারখানাগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে, তা থেকে আয় করে ব্যাংকে ফেরত দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। স্বল্প সময়ে ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এরই মধ্যে আবার নতুন সংযোজিত আন্তর্জাতিক ক্রেতা আরোপিত অ্যাকর্ড এলায়েন্সসহ অন্যান্য কম্পালায়েন্স সনদ দিতে প্রায় দুই বছর নিয়ে নেয়। এখানে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ শিল্প মালিক বা উদ্যোক্তা ব্যাংকের কর্মচারীর মতো কাজ করেই যাচ্ছেন। বাস্তবে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেভাবে এগুতে পারছেন না। 
 
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান আরো বলেন, প্রচলতি ধারণা থেকে বের হয়ে এসে দেশবন্ধু গ্রুপ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিনিয়োগ নিয়ে আসার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে সুকুকের মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বা ২১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আনতে যাচ্ছে। এই তহিবল থেকে স্থানীয় ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধ এবং নতুন কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান ব্যবসার পরিধিও বাড়াতে এই বিনিয়োগ সহায়তা করবে। যার ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। প্রস্তুতকৃত পণ্য দেশের বাজারে ও বিদেশে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূল্যে বিক্রি করা যাবে।  
 
দেশের বিশিষ্ট এই শিল্পপতি আরো বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপ সরকারের রুগ্ন শিল্প বেসরকারিকরণের মাধ্যমে নিয়ে তা চালু করে এক অনন্য নিদর্শন সৃষ্টি করেছে। তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলো দেশবন্ধু সুগারমিল। ক্রমাগত লোকসানে ১৯৯৫ সালে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে। এরপর সরকারের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০১ সালে দেশবন্ধু গ্রুপ মিলটি ক্রয় করে সরকারের বিক্রয় নীতিমালার আলোকে পুরনো শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করে আখচাষিদের মাধ্যমে আখ ক্রয় করে মিলটি চালুর ব্যবস্থা করে। দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় এবং ঢাকা শহরের নিকটস্থ (নরসিংদী) হওয়ায় আখচাষিরা ইতোমধ্যে আখের মতো দীর্ঘমেয়াদি কৃষিপণ্য চাষাবাদ বন্ধ করে অন্যান্য অর্থকরী এবং কম সময়ে প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু করে। অনেক চেষ্টা করেও কৃষদের ভালো বীজ, কীটনাশক ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও আখের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি কৃষিপণ্য উৎপাদনে তারা ফেরেনি। কৃষকদের আখ উৎপাদনে উৎসাহিত না করতে পেরে ২০০৫ সাল থেকে দেশবন্ধু সুগারমিল বিদেশ থেকে মিলটির কাঁচামাল আমদানি করে স্থানীয় বাজারে সুলভমূল্যে চিনি সরবরাহ করতে থাকে। উৎপাদিত চিনি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করে। 
 
গোলাম মোস্তফা বলেন, শুধু তাই নয় দেশবন্ধু গ্রুপ নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্তির জন্য চেষ্টা করছে। দেশবন্ধুর মতো আরো অনেক কোম্পানি ২০২৩ সালে নিউইয়র্কসহ বিশ্বের প্রভাশালী স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তালিকাভুক্ত হবে। আমরা আশা করি জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর যেভাবে এগিয়েছে, ঠিক সেভাবেই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।  
 
আজকালের খবর/এএইস